প্রবন্ধমনন-অনুধাবন

প্লাস্টিক জ্বালিয়ে দূষণ করছে পৌরসভা

আজ সকালে কল্যাণীতে ঘরের মধ্যে বসে কাজ করছি। এমন সময় প্লাস্টিক পোড়া প্লাস্টিক পোড়া গন্ধ নাকে আসতে শুরু করল। ভাবলাম কোথাও তারের ইন্সুলেশন পুড়ছে কিনা। দেখবার চেষ্টা করলাম। হঠাৎ দরজা খুলে দেখি কল্যাণী পৌরসভার যে লোকগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজগুলো করেন, তারা মাঠের মধ্যে পড়ে থাকা প্লাস্টিকগুলোকে এক জায়গায় করে সেখানে আগুন দিচ্ছেন। এটা একটা জায়গায় নয় আগুন দিয়েছেন তারা অন্তত ১০ জায়গায়। এখানে একটু, ওখানে একটু জমা করে বিভিন্ন জায়গাতে।

প্রশ্ন করলাম তাদেরকে, জানতে চাইলাম তোমরা এটা কেন করছ? তোমরা পাতা পুড়িয়ে দাও কিন্তু প্লাস্টিক কেন পোড়াবে? তাদের বক্তব্য হল যে প্লাস্টিক গুলোতো আপনারাই ফেলেন। বাড়ি থেকেই পড়ে। তো আমরা কি করতে পারি। আমাদেরকে পৌরসভার ওয়ার্ড অফিস থেকে বলেছে প্লাস্টিক জ্বালিয়ে দিতে। তাদের কথা কিছুতো সত্যি বটেই, কারণ প্লাস্টিকগুলো আসে কোত্থেকে? আসে পাশের বাড়ি থেকেই। আশেপাশের সব বাড়িই খুবই স্বচ্ছল এবং তথাকথিতভাবে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং আর্থিক যোগ্যতা অনেক। কিন্তু তারপরেও সব জেনে বুঝেও তাদের বাড়ি থেকেই প্লাস্টিকগুলো রাস্তায়, ড্রেনের পাশে যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হয়।

একথা একদম ভুল বলেনি। কিন্তু তার মানে তো এই নয় যে পৌরসভার ওয়ার্ড অফিস থেকে অর্ডার দেওয়া হবে যে তোমরা প্লাস্টিকগুলো জ্বালিয়ে দিও। এই পুরসভায় অনেক খরচ তারা ইতিমধ্যেই করেছেন, তারা ভ্যাট লাগিয়েছেন, বাড়িতে বাড়িতে নীল এবং সবুজ ডাস্টবিন দিয়েছেন কোনটায় পচনশীল বস্তুকে ফেলতে হবে কোনটা অপচনশীল বস্তুকে ফেলতে হবে। সেই বাড়ির লোকেরা বলছে যে পৌরসভা থেকে দিয়েছে, খরচ হয়েছে, কিন্তু আমরা যখন পৌরসভার ময়লা ফেলার গাড়িতে এটা ফেলি তখন সব তারা এক জায়গায় করে ফেলে, ফলে এই যে অর্থের অপচয় এদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া এদের সচেতনতা বাড়াবার জন্য প্রচুর টাকাই শুধু খরচ হয়েছে, এগুলো কোনটাই কাজে আসেনি। সহজ উপায় হচ্ছে চোখে যেন এলাকাটা পরিষ্কার লাগে। কাল কোন নেতা আসবেন, কোন মন্ত্রী আসবেন, কেউ পরিদর্শনে আসছেন, চোখে যেন এলাকাটা পরিষ্কার লাগে তাই তারা আসার আগেই এলাকাকে জঞ্জালমুক্ত করতে হবে প্লাস্টিক মুক্ত করতে হবে।

কিন্তু প্লাস্টিক পোড়ানোটা কি আপনি যথার্থ মনে করছেন? আমার কাছে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়, মেনে নেওয়া যায় না। আমরা আশা করব এই পুরো ব্যাপারটা নিয়ে কিছু চর্চা হোক। বিভিন্ন জায়গাতেই সমস্যা আছে আমি জানি। সেই চর্চা থেকে কিছু বেরিয়ে আসুক। পলিসি লেভেলে যা সত্যিকারের কোন কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে। সকলকে অনুরোধ করছি আপনারা এই ছবিগুলোকে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে দিন।

অনিরুদ্ধ দে

About author

Articles

সমাজবিজ্ঞানী এবং বিজ্ঞানকর্মী
অনিরুদ্ধ দে
Related posts
খবররাজ্য

প্লাস্টিক বর্জ্য-আবর্জনা ব্যবহার করেই সজ্জা, অভিনব প্রতিবাদ কলাভবনের ছাত্রদের

শান্তিনিকেতন গেছেন অথচ সোনাঝুরির হাটে যাননি, এমনটা হয় না। সাজসজ্জার হাজারো পসরা সাজিয়ে সেখানে যে পর্যটকদেরই অপেক্ষায় থাকেন শিল্পীরা। কিন্তু সেই সোনাঝুরির হাটই ভরে যাচ্ছে আবর্জনায়। পর্যটকদের ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক-সহ নানা বর্জ্যে সৌন্দর্য হারাচ্ছে সোনাঝুরি।…
Read more
কলকাতাখবররাজ্য

পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে অভিনব উদ্যোগ শহরে, শুরু ওয়ার্কশপ

মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যে সুসম্পর্ক, অস্তিত্ব সচেতনতা তৈরি করার নতুন প্রয়াসে মার্লিন গ্রুপ কলকাতায় নেচার ফটোগ্রাফিকে কেন্দ্র করে একটি উদ্যোগ শুরু করতে চলেছে। নাম, মার্লিন গ্রিন ফ্রেমস। এটি একটি পরিবেশ কেন্দ্রিক ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা এবং ওয়ার্কশপ।…
Read more
কলকাতাখবরদেশরাজ্য

যশোর রোডের শতাব্দীপ্রাচীন ৩০৫টি গাছ কাটার অনুমতি দিল সুপ্রিম কোর্ট

যশোর রোডের বারাসত থেকে বনগাঁ পর্যন্ত অংশে ৩০৫টি শতাব্দীপ্রাচীন গাছ কাটার অনুমতি দিল সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৮ সালে গাছ কাটায় স্থগিতাদেশ দিয়েছিল আদালত। বুধবার সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে আদালত জানায়, গাছ কাটার আগে ১৫০০টি গাছ লাগাতে…
Read more

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *