বালিশের ওপর মাথা রেখে তো আমরা সকলেই ঘুমোই। তবে নেত্রকোনায় এক ধরনের বালিশ আছে, যা তুলো দিয়ে তৈরি নয়। এটিও তুলতুলে, তবে তা মাথায় না দিয়ে খাওয়া হয়। এটি আসলে মিষ্টি। বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলা শহরের গয়ানাথ ঘোষ নামের এক ব্যক্তি বিখ্যাত এই বালিশ মিষ্টির উদ্ভাবক। তাই এটি গয়ানাথের বালিশ নামেও পরিচিত।
তাঁর জন্ম ১৮৮৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। এই হালুইকর নেত্রকোনা জেলা শহরের বারহাট্টা রোডে একটি মিষ্টির দোকান শুরু করেন। তাঁর দোকানের নামই ছিল গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। তবে একসময় তিনি ধরাবাঁধা নিয়মের বাইরে কিছু করার কথা বিবেচনা করেন। যার ফলশ্রুতিই হল নতুন এক মিষ্টির উদ্ভব। আকারে সাধারণ মিষ্টির চেয়ে আলাদা, স্বাদেও।
আরো পড়ুন : প্রাচীন পদ্ধতিতে বিস্কুট তৈরি করে যাচ্ছে গণি বেকারি

একদিন তিনি বিশাল আকারের কয়েকটি মিষ্টি তৈরি করেন। ক্রেতাদের প্রশংসা মেলে। মিষ্টির আকার ছিল অনেকটা কোলবালিশের মতো। তাই এটির নাম রাখা হয় বালিশ মিষ্টি। স্বাদে অতুলনীয়। অল্প দিনেই ছড়িয়ে পড়ে এর সুনাম। পাশাপাশি গয়ানাথের নামটিও জড়িয়ে যায় মিষ্টিটির সঙ্গে। এখন সেই শহরের আট-নয়টি দোকানসহ বিভিন্ন উপজেলাতেও বালিশ মিষ্টি তৈরি এবং বিক্রি হয়।
প্রথমে ছানার সঙ্গে সামান্য ময়দা মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করা হয়। এই মণ্ড দিয়ে বানানো হয় বিভিন্ন আকারের বালিশ। তা ঘণ্টাখানেক ভাজা হয় চিনির গরম রসে। এরপর ঠান্ডা করে চিনির রসে ডুবিয়ে রাখা হয় দীর্ঘক্ষণ। বিক্রির সময় বালিশের ওপর দেওয়া হয় ক্ষীরের প্রলেপ বা দুধের মালাই। বর্তমানে এই মিষ্টি তৈরির প্রধান কারিগর রতন পাল। তাঁকে সহযোগিতা করেন ১০ জন কারিগর।
আরো পড়ুন : বগুড়ার মায়াবী দইয়ের খ্যাতি বিশ্বজোড়া
এই মিষ্টি বর্তমানে মোট পাঁচ আকৃতির হয়ে থাকে। নেত্রকোনা জেলা শহরটি ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় এ দেশের মানুষ ভারতেও আত্মীয়স্বজনের কাছে নিয়ে যান এই মিষ্টি। তাই এই মিষ্টির ব্যাপক চাহিদা, জনপ্রিয়তা ও দীর্ঘ ঐতিহ্যকে বিবেচনায় রেখে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ অন্যান্য শহরেও শাখা বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে। এমনকি দেশের বাইরেও সরবরাহের ইচ্ছা পোষণ করছেন তাঁরা।
ভালোবাসার পক্ষে থাকুন, নিবিড়-এর সঙ্গে থাকুন
