বিস্কুট তৈরিতে মাটির তন্দুর এখন বিলুপ্তপ্রায়। সে জায়গা দখল করে নিয়েছে বৈদ্যুতিক ওভেন। আবার আজ ইস্ট ছাড়া বিস্কুট তৈরির কথা ভাবাই যায় না। এসব আধুনিক যন্ত্র আর উপাদান দূরে ঠেলে প্রাচীন পদ্ধতিতে বেলা বিস্কুট তৈরি করে যাচ্ছে গণি বেকারি। গবেষকদের ধারণা, ২০০ বছর আগে উপমহাদেশে এই বেকারিতে প্রথম তৈরি হয়েছিল বেলা বিস্কুট।
ব্রিটিশ আমলেও তৎকালীন চট্টগ্রাম পৌরসভার মানুষের খাদ্যাভ্যাসের তালিকায় ছিল বেলা বিস্কুট। পান্তাভাতের পরিবর্তে ধোঁয়া ওঠা চায়ে বেলা বিস্কুট ডুবিয়ে তৃপ্তির চুমুক দিতেন সকলে। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে গ্রামগঞ্জে। আর এখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশেও রপ্তানি হয় বেলা বিস্কুট। বেলা বিস্কুট তৈরির ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে গণি বেকারির নাম।
আরো পড়ুন : মুঘল আমলে পিঠের গায়ে থাকত ইতিহাস
বেলা বিস্কুট কোনো অসাধারণ বিস্কুট তা কিন্তু নয়। কিন্তু এখনো টিকে আছে ঐতিহ্য। আগে গ্রামাঞ্চলে বেলা বিস্কুট নিয়ে স্লোগান প্রচলিত ছিল “বেলা বিস্কুট ঠেলা গাড়ি – এক্ক (এক) ঠেলায় দোহাজারি।” অর্থাৎ দৈনিক ভিত্তিতে যাদের কাজে নিয়োগ করা হত তারা ঠেলাগাড়ি করে কোনো জিনিস আনা-নেওয়ার আগে বেলা বিস্কুট দিয়ে চা পান করত আর পথে খাওয়ার জন্য নিয়ে যেত বেলা বিস্কুট। এক ঠেলায় দোহাজারি যাওয়ার মানে হচ্ছে, যাতে দ্রুত কাজ করা যায়।

ঠিক কখন গণি বেকারিতে বেলা বিস্কুট তৈরি শুরু হয় তার সঠিক তথ্য নেই। তবে মোগল আমলের শেষদিকে ও ইংরেজ আমলের শুরুতেই ভারতের বর্ধমান থেকে আগত ব্যক্তিরা এই বেকারিশিল্পের সূচনা করেন চট্টগ্রামে। আবদুল গণি সওদাগরের পূর্বপুরুষ লাল খাঁ সুবেদার ও তাঁর ছেলে কানু খাঁ মিস্ত্রির হাত ধরে বেকারি পণ্য তৈরির সূচনা হয় এই অঞ্চলে—এমন তথ্যই মিলেছে গবেষকদের লেখায়।
আরো পড়ুন : শ্রীরামপুরের ‘অলৌকিক’ গুটকে সন্দেশ
মোগল ও পর্তুগিজদের খাদ্যাভ্যাসে ছিল রুটি, পাউরুটি, বিস্কুটসহ বেকারি পণ্য। তাদের খাদ্যাভ্যাসের কারণে বেকারিশিল্পের যাত্রা শুরু হয় প্রায় ২৫০ বছর। আগে। শুরুতে রুটি তৈরি হতো বেকারিতে। এরপর ধীরে ধীরে তৈরি হয় পাউরুটি, কেক, বেলা বিস্কুট। মোগল, পর্তুগিজ বা ইংরেজদের মতো বেকারি পণ্যে অভ্যস্ত হতে থাকে মানুষ। বেকারি পণ্য তৈরির সময় তখনকার উদ্যোক্তারা বেলা বিস্কুট নামে বিশেষায়িত বিস্কুট তৈরি করেন। এই হিসাবে বেলা বিস্কুট তৈরির ইতিহাস ২০০ বছরের কম হবে না।
ভালোবাসার পক্ষে থাকুন, নিবিড়-এর সঙ্গে থাকুন
