দিল্লির লোকাল ট্রেনের কামরায় ভিক্ষা করেই জীবন শুরু তাঁর। যাত্রীদের কটূক্তির শিকারও কম হয়ে হয়নি তাঁকে। তাঁর একটাই অপরাধ, তিনি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। তারপর এক দীর্ঘ লড়াইয়ের শেষে অবশেষে সেই তিনিই হয়ে উঠলেন ভারতের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের চিত্র সাংবাদিক। এমনই এক অবিশ্বাস্য জীবন কাহিনী যাঁর, তাঁর নাম জয়া থমাস লোবো।
ছোট থেকেই চলার পথে অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছেন জয়া। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হওয়ার অপরাধে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় তাকে। তারপর থেকেই মা এবং ছোটো দুই ভাইবোনের পরিবারে ওই বয়স থেকেই রোজগারের পথ খুঁজতে হয় জয়াকে। রেল স্টেশনের কাছেই মহিম কাপড় বাজারে থাকতেন তাঁরা। তাই রেলের কামরাকেই রোজগারের প্রথম মাধ্যম হিসাবে বেছে নেন তিনি। নিজের জীবন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে জয়া জানান, “মাত্র ১১ বছর বয়সেই আমি অন্যান্য ছেলেদের সঙ্গে নিজের পার্থক্যটা বুঝতে পারি। মার খাওয়ার ভয়ে সে সময়ে কারোর সঙ্গেই কথা বলতে পারতাম না। হেনস্থার ভয়ে একের পর এক বাড়ি বদল করেছি আমরা। ১৭ বছর বয়সে গুরু সালমার সঙ্গে পরিচয় হয় আমার। তিনিই আমাকে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। নিজের পরিচয় গড়ে তুলতেও সাহায্য করেন তিনিই।”
ছবি তোলার শখ ছিল তাঁর ছোট থেকেই। তবে তখন থেকেই কোনও সুযোগ পাননি জোয়া। নিজের পরিচয়ে স্বতন্ত্র হয়ে উঠতে ট্রেনে ভিক্ষার টাকাতেই কিনে ফেলেন একটা ক্যামেরা। আর গতবছর লকডাউনের জেরে লোকাল ট্রেন পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়াতেই যেন বড় সুযোগ আসে তাঁর কাছে। বান্দ্রা স্টেশনে পরিযায়ী শ্রমিকদের অবরোধের ছবি তুলেই নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেন তিনি৷ সেই লোকাল ট্রেন থেকেই শুরু হয় তাঁর আগামীর এক নতুন পথ চলা। জোয়ার সেই ছবিই পরে প্রকাশিত হয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। বিভিন্ন মহলে উচ্চ প্রশংসিতও হয়। ক্রিস্টান সম্প্রদায়ে বেড়ে ওঠার ফলে ইংরেজি ভাষা তাঁর রপ্ত ছিল আগেই। এভাবেই ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন ভারতের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের চিত্র সাংবাদিক। তাঁর এই স্বপ্নের দৌড় যেন অনুপ্রেরণা যোগায় সমাজে বসবাসকারী অন্যান্য তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদেরও। সমাজের মানুষের সকল কটুক্তির শিকার হয়ে, জীবনে বেচেঁ থাকার লড়াইকে সাক্ষী করে যাঁরা এগিয়ে চলেছেন নিজেদের লক্ষ্যে। তাই নেটিজেনরাও আজ কুর্নিশ জানাচ্ছেন জোয়াকে।
নিবিড় ডেস্ক
