সম্পাদকীয়

একুশের অঙ্গীকার

এবছর সব রাজনৈতিক দলই ‘খেলা’-র নেশায় টইটম্বুর। মাঝখানে পড়ে থাকি আমরা – ফুটবল হয়ে লাথি খাওয়ার জন্য। কিংবা ব্যাটের আঘাতে ক্রিকেট বলের মতো কখন ছিটকে যাব বাউন্ডারি ছাড়িয়ে, তার অপেক্ষায়। স্টেডিয়াম ভর্তি লোক উচ্ছ্বাসে লাফিয়ে উঠবে। ব্যাটসম্যানকে অভিনন্দন জানাবে হাততালি দিয়ে। সেটা অবশ্য তাদের একমাত্র কাজ নয়। দর্শক নিজেই কখন বল হয়ে যায়, গ্যালারি থেকে চলে যায় বোলারের হাতে, মূল ধারার মিডিয়া আপনাকে সেটা দেখাবে না। উইকেট পড়লে ব্যাটসম্যান গিয়ে প্যাভিলিয়নে বিশ্রাম নেবেন। ফিল্ডিং-এ নামতে প্রস্তুত হবেন। কিংবা অপেক্ষা করবেন পরের ম্যাচের জন্য। বলেদের তেমন সৌভাগ্য নেই। ম্যাচ ফুরোলে আয়ু শেষ। এ তো পাড়ার ক্রিকেট নয়। স্পনসরদের মোচ্ছব।

কেউ কেউ বলছেন, এবারের ভোটে উত্তেজনা নাকি ১১ সালের থেকেও বেশি। সব শাসকের হাতই রক্তে মাখা থাকে। কিন্তু এবার শুধু রক্ত নয়, মাংস লোলুপ হায়নারাও ঘিরে ধরেছে চারদিকে। ১৯৫২ সালের কথা বারে বারে মনে পড়ে যায়। ভাষা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে শহিদ হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল পড়ুয়া। একুশে ফেব্রুয়ারি এলে কয়েক বছর ধরে এপার বাংলার কিছু মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখছে, “বাংলাদেশের ভাষা দিবস নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের এত দরদ কেন?” দিন দিন বাড়ছে এমন পোস্টের সংখ্যা। মুখে সরাসরি যা বলা যায় না, সেইসব চাপা ঘৃণা-বিদ্বেষ বেরিয়ে আসে সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রকাশ্যে ধর্ষণের হুমকি দিতে হাত কাঁপে না। কিছু মহিলা আবার তা সমর্থনও করেন। এতটাই গভীরে ঢুকে গিয়েছে অসুখ। মসনদ যদি এদের দখলে আসে…! সেই ভয়ানক দিনের কথা ভেবেও শিউড়ে উঠতে হয়!

‘নিবিড়’-এর কাছে আজকের দিনটি নতুন এক সুযোগ নিয়ে হাজির। নতুন করে লড়াই। নতুন করে বন্ধুত্ব। বেঁচে থাকার লড়াই তো বন্ধুত্ব ছাড়া হয়ই না। রক্তলোলুপ মাংসলোলুপ হিংসাকে পরাজিত করা যায় না ভালোবাসা ছাড়া। আজ একুশে ফেব্রুয়ারি। পৃথিবীর সমস্ত মাতৃভাষা যাতে সব রকম অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকে – তার শপথ নেওয়ার দিন। যারা ভাষাহীন, তাদের সঙ্গে একাত্ম হতে চাই আমরা। সারা দুনিয়ার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য সওয়াল করবে ‘নিবিড়’। দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে গলা চড়াবে। তুলে ধরবে প্রান্তিকদের স্বর। বাংলা ভাষা আর বাঙালিয়ানাকে উন্মুক্ত করে দেবে বহুধা প্রবাহে । আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এই আমাদের অঙ্গীকার।

শ্রেয়ণ

ছবি – মুকুট তপাদার

About author

Articles

‘নিবিড়’ পত্রিকার সম্পাদক
শ্রেয়ণ
Related posts
প্রবন্ধমনন-অনুধাবন

বিজেপিমুক্ত ভারত গড়তে চাই মজবুত সংগঠন

সম্পাদকের নির্দেশ বা পরামর্শ মেনে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিষয়গুলি নিয়ে নিজের মতপ্রকাশের চেষ্টা করছি। সম্প্রতি বেশ কিছু রাজ্যের নির্বাচন ও উপ-নির্বাচন শেষ হল। উত্তর-পূর্ব ভারতের সব কটি রাজ্যে কংগ্রেস দলটি হেরেছে। সর্বত্র ক্ষমতাসীন দল বিজেপি জিতেছে…
Read more
প্রবন্ধমনন-অনুধাবন

শুভাপ্রসন্নের হাত ধরে সঙ্ঘের ভাষা বিভেদকারী রাজনীতি

ভাষা হল সংস্কৃতি, পরিচয় এবং রাজনীতির এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভাষাই ছিল সেই যার উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর বুকে বাঙালির দেশ তৈরী হয়েছিল ১৯৭১-এ। আমরা সদ্য একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করলাম, শ্রদ্ধা জানালাম ভাষা শহিদদের। সেই…
Read more
প্রবন্ধমনন-অনুধাবন

ভাষিক অধিকার নয়, বঞ্চনাই এদেশের নিয়ম

ভাষা দিবসে খাওয়া দাওয়া “ভাষা দিবস উপলক্ষে ২০-২৬ ফেব্রুয়ারি… রেস্তোরাঁয় পাওয়া যাবে বিশেষ থালি।… পুরো থালির দাম পড়বে ৮৯৯ টাকা।কর অতিরিক্ত.” (এই সময় / ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) এটা কোনো প্রহসনের পোস্টার নয়। সম্পূর্ণ বাস্তব। পকেটে…
Read more

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *