বাংলাদেশের বগুড়াকে দইয়ের শহর বলা হয়। সেখানকার দইয়ের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। শুধু দইকে কেন্দ্র করেই এই জেলা পেয়েছে ভিন্ন পরিচিতি। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় বগুড়ার দইয়ের জনপ্রিয়তা যুগ যুগ ধরে অটুট। প্রতিদিন বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয় বগুড়ার দই। শুধু কি বাংলাদেশ! ব্রিটেনের রানির থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পরে এই দইয়ের সুখ্যাতি। ১৯৩৮ সালে সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে প্রচারিত হয় বগুড়ার দইয়ের সুখ্যাতি।
বগুড়ার প্রবীণদের মতে, এই দইয়ের শুরুটা হয়েছিল শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুর অঞ্চলে। কথিত আছে, ষাটের দশকে গৌর গোপাল পাল নামের এক ব্যবসায়ী প্রথম পরীক্ষামূলক দই তৈরি করেন। তখন দই সম্পর্কে ভালো ধারণা ছিল না। গৌর গোপালের সেই দই ধীরে ধীরে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী নবাব পরিবার ও সাতানি পরিবারের কাছে দই সরবরাহ করতেন গৌর গোপাল। সে সময়ে এ দইয়ের নাম ছিল নবাব বাড়ির দই। নবাবি আমলে বিশেষ খাবার ছিল দই।
আরো পড়ুন : প্রাচীন পদ্ধতিতে বিস্কুট তৈরি করে যাচ্ছে গণি বেকারি

এখনও বিশেষ খাবার হিসেবে দইয়ের জনপ্রিয়তা রয়েছে। পুজো, বিয়ে, জন্মদিন, হালখাতা বা পারিবারিক ও সামাজিক নানা অনুষ্ঠানে দই বিশেষ খাবার হিসেবে পরিবেশিত হয়ে থাকে। তাছাড়া প্রতিদিনই দই বিক্রি হয়। স্বাধীনতার পর বগুড়ায় দই তৈরিতে শহরের গৌর গোপালের পাশাপাশি মহরম আলী ও বাঘো পাড়ার রফাত আলীর নাম ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় ছোটো ছোটো মাটির পাত্রে (স্থানীয় ভাষায় হাঁড়ি) দই দেওয়া হত। কেউ যেন না তৈরি করতে পারে এজন্য ঘোষ পরিবার দই অতি গোপনীয়তার সাথে তৈরি করলেও গোপনীয়তা ধরে রাখতে পারেনি বেশিদিন।
এখন বগুড়ার শেরপুরসহ নানা জায়গায় তৈরি হয় এই দই। তবে বগুড়ার ভেতর শেরপুর ও সোনাতলার নামাজখালীর দই সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ। দই তৈরিতে ব্যবহার করা হয় দুধ, চিনি ও মাটির কাপ বা সরা। একটি বড় পাত্রে প্রায় ছয় ঘণ্টা দুধ ও চিনি জ্বাল দেওয়ার পর যখন লালচে বর্ণ ধারণ করে তখন তা মাটির সরা বা কাপে রেখে ঢেকে রাখা হয়। এরপর সারারাত ঢেকে রাখার পর সকালে দই প্রস্তুত হয় এবং খাওয়ার উপযোগী হয়। ১৬ মণ দুধে প্রায় ৪৫০ সরা দই বানানো সম্ভব বলে জানান দই কারিগরেরা।
আরো পড়ুন : মুঘল আমলে পিঠের গায়ে থাকত ইতিহাস
দেশে-বিদেশে দইয়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দই বগুড়া থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় চলে যায়। বাসে করে মূলত দেশের মধ্যে দই পরিবহন করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন জেলা থেকে দই নিতে অর্ডার দিয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিযোগিতার এই বাজারে দইয়ের মান ধরে রাখা কঠিন। বাজারে নিম্নমানের দইয়ের ভিড়ে বেশি দামে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি নিয়ে হয় ঝুট-ঝামেলা। আবার দাম কমিয়ে দইয়ের গুণগত মান ঠিক রাখাও যায় না। তাই সেদিকে নজর রাখাই এখন মূল ভাববার বিষয় কারিগরদের কাছে।
ভালোবাসার পক্ষে থাকুন, নিবিড়-এর সঙ্গে থাকুন
