কিছুদিন আগেই হটাৎ শোনা গেল, সেলিম সাহেব হুগলির চণ্ডীতলা (ডানকুনি অঞ্চল) থেকে ভোটে দাঁড়াবেন। খুব অবাক হয়ে ভাবছিলাম, এত জায়গা থাকতে ওখানে কেন? ব্রিগেডের সভার দৃশ্যাবলী থেকে বিষয়টা পরিষ্কার হল, কেন মহঃ সেলিমের এত আব্বাস প্রেম! মঞ্চে ওঠার আগেই জড়িয়ে ধরলেন। আরও কত কি করলেন সবাই দেখেছেন। বিমানবাবু জোরালো হস্তক্ষেপ না করলে হয়তো আরো কিছু বিষদৃশ্য দেখতে হোত। আসল ঘটনা হল, আব্বাসের আশ্বাসেই চণ্ডীতলার মতন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কেন্দ্র থেকে দাঁড়াচ্ছেন সেলিম। গত লোকসভার ভোটে শুধুই হারেননি, জামানতও খুইয়েছিলেন। অথচ এর আগে ওই রায়গঞ্জ কেন্দ্র থেকেই এমপি ছিলেন। ফলে নির্বাচনে জেতা তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারের জন্য খুবই জরুরি ছিল। তাই আব্বাসকে তাঁর এত বেশি প্রয়োজন। আব্বাস নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করার উদগ্র বাসনাকে চরিতার্থ করতে যখন মিম নেতা ওয়েইসি সাহেবকে নিজের বাড়িতে ডেকে এনে হাত মেলানোর প্রক্রিয়া চালু করেন, তার পরেই সেলিম সুযোগের সদ্ব্যবহার করে তাঁর মেন্টররূপে নানাভাবে গাইড করার ফাঁকেই নিজের ভোটকেন্দ্র ও জয়ের বিষয়টি পাকা করে ফেলেন।
অতীতে আব্বাসের যেসব ভিডিও ভাষণ আমরা দেখেছি, তাতে একজন চরম সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন রাজনীতিকরূপে তাঁর যথার্থ পরিচয়টি বুঝতে কারও অসুবিধে হয়না। ভোট রাজনীতির স্বার্থে সেলিম তথা সিপিএম কখনোই স্বীকার করবে না আব্বাসের সাম্প্রদায়িক মনোভাবের বিষয়টি। কিন্তু একথা কি বিশ্বাসযোগ্য যে, কোনরকম রাজনৈতিক শিক্ষা বা অনুশীলন ছাড়া সংকীর্ণ ধর্মীয় আবহাওয়ায় বেড়ে ওঠা কারো পক্ষেই কি স্বীয় বিশ্বাস ও ভাবনাকে সম্পূর্ণ মুছে ফেলে রাতারাতি প্রকৃত ‘সেকুলার’ বনে যাওয়া সম্ভব আদৌ? আব্বাসের পারিবারিক ধর্মীয় ক্ষমতার অংশদারিত্বে কারও প্রতি পরশ্রীকাতরতার কারণে রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করা তাঁর জন্য খুবই জরুরি ছিল। এবং তারই প্রস্তুতিতে সভা-সমাবেশেরও আয়োজন চলছিল ঘটা করে বেশ কিছু দিন ধরেই, আর সেখানেই তিনি নিজস্ব ভাবনাকে গোপন করেননি, খোলাখুলি ধর্মীয় উন্মাদনাকে সোচ্চারে প্রচার করেছেন। সেই ভাষণ শুনলে যে কোন সাধারণ হিন্দু সহজেই বিজেপির পাতা ফাঁদে পা দিয়ে দেবেন নিশ্চিতভাবেই। এতে একতরফা লাভ বিজেপির, ক্ষতি মমতার, ক্ষতি ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির। সেকারণেই দিলীপ ঘোষ তাঁর মত ব্যক্ত করে বলেছেন, “আমার মতোই আব্বাসেরও রাজনীতি করার অধিকার আছে”। আহা, কী শুনিলাম, প্রাণ জুড়াইয়া গেল। সাধে কি বলে- রতনে রতন চেনে…।
একথা মানতেই হবে যে, ব্রিগেডের সাফল্য নিয়ে সিপিএমের লোকজন এমনই উচ্ছ্বসিত যে মনে হচ্ছে যেন, মমতার বিদায় ঘটে গেছে আর দিলীপ ঘোষ শপথ গ্রহণের অপেক্ষায় আছে। একেই বোধ করি বলে ‘উইসফুল থিঙ্কিং’। এরপরে রাজ্যের কী হবে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির কী হবে, সে নিয়ে সামান্য দুশ্চিন্তাও নেই। অন্ধ বিদ্বেষমূলক রাজনীতির কারণে কংগ্রেসের এই হাড়ির হাল করে, মোদির চূড়ান্ত ক্ষমতা অর্জনের পর এখন বোধদয় ঘটেছে, ফলে এখন কংগ্রেসের হিতাকাঙ্ক্ষী হবার ভান করছে সিপিএম। কিন্তু এখানেও চালাকি করে মুখে দু’দলের বিরুদ্ধেই লড়াইয়ের কথা বললেও আদতে মূল লক্ষ্য (আগে রাম পরে বাম) মমতাকে সরানো, যার ফলশ্রুতিতে নিশ্চিতভাবেই বিজেপিকে ক্ষমতা লাভের সুযোগ করে দেওয়া। কারণ, বর্তমান পরিস্থিতিতে সিপিএম জোটের জয়লাভ আকাশকুসুম কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়, সেটা বোধ করি একটা শিশুও জানে। কিন্তু সিপিএমের এই দায়িত্বজ্ঞানহীন ঘৃণ্য কৌশল সফল হবে কিনা, তা ঠিক করবেন রাজ্যের সচেতন মানুষই।
কল্যাণ সেনগুপ্ত
