ভাইরাসের দোহাই দিয়ে লকডাউনের পর লকডাউন হবে। ভ্যাকসিনের পর ভ্যাকসিন। প্রথমে ভ্যাকসিন এসেছিল এই বলে যে, ভ্যাকসিন নিলে আর কারোর করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোভিড হবে না। একটু পরে বয়ান পাল্টে গেলো। বলা হল, ভ্যাক্সিন নিলেও কোভিড হতেই পারে তবে রোগের প্রাবল্য কমবে। তারপর যখন দেখা গেল দুটো ভ্যাকসিন নিয়েও সিরিয়াস পেশেন্ট হিসেবে মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে ও মারাও যাচ্ছে (উদাহরণ: ইজরায়েল)। তখন বলা হল, ওহো, ভাইরাসটা দুর্ধর্ষভাবে খালি তার নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আসছে! তাই তৃতীয় ভ্যাকসিন চাই বা বুস্টার ডোজ।
ভারতে সিরাম ইনস্টিটিউটের মালিক আদার সি পুনেওয়ালার সে কী গর্জন! সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা যেন ভ্যাকসিনের বিরোধিতা নিয়ে আগামি তিন বছর কোনো মামলা না শোনেন এবং প্রতিটি নাগরিক যেন ভ্যাকসিন নেয় তা সুনিশ্চিত করার জন্য সরকারকে যেন নির্দেশ দেন। এদিকে সরকার প্রথমে বলল, ভ্যাকসিন নিখরচায় দেওয়া হবে; তারপর বলল, না, না, বাজার থেকেই কিনতে হবে। মহামারি, অতিমারি যদি জনস্বাস্থ্যের সংকট হয় তাহলে একজন নাগরিকও বাজার থেকে ভ্যাকসিন কিনবেন, এটা কি ন্যায়?
আরো পড়ুন : স্বাস্থ্যের অসুখ – বিজ্ঞান বনাম নৈতিকতা
কী চলছে তাহলে?
একদিকে ভ্যাকসিন নিয়ে চূড়ান্ত, অকল্পনীয় ব্যবসা; সরকারের দোসর কর্পোরেটরা সমস্ত বাজারটাকেই ডিজিটাল, অনলাইন করে দিতে চাইছে। তাদের হাতে যেন সময় নেই, যা করার এক্ষুনি করে ফেলতে হবে। তার জন্য যত মানুষকে আটকে রাখা যাবে, ততই ডিজিটাল ভার্চুয়াল বাজার স্ফীত হবে অসম্ভব রকেট গতিতে। মানুষ কাজ হারাবে। অন্যদিকে, এখন আর বিদ্যালয়ের দরকার নেই। বাজারে অ্যাপ চলে এসেছে, তাতেই পড়াশুনো, পরীক্ষা, পাশ-ফেল সব হয়ে যাবে। যেন পরীক্ষা আর পাশ-ফেলই বিদ্যালয়ে যাবার একমাত্র কারণ। বাচ্চাদের সমাজে পরিচিত হবার দরকার নেই। এইভাবে তারা নিজের ভাষা হারিয়ে ফেলবে, জগৎকে চেনা ভুলে যাবে। প্রতিবাদ করাও ভুলে যাবে।
পুঁজির এই নয়া রূপান্তরের জন্য কোভিডটা সত্যিই দরকার ছিল। পুঁজি যেখানে এগুতে পারে না, তখন সে মরিয়া হয়ে কানাগলি থেকে বেরোবার পথ খোঁজে। পুঁজিবাদ এমনি এমনি সোপান তৈরি করে না, এমনি এমনি ধ্বংস হয়ে বিলীন হয়ে যায় না। সে এখন আরো আরো বাহানা তুলবে, সে নৈতিকতার ধার ধারে না। পুঁজিবাদের নয়া রূপান্তর জোর করেই করতে হয়, জোরজুলুম করে, দরকারে চক্রান্ত।
তাই লকডাউনকে চক্রান্ত বলেই ভাবা দরকার। লকডাউনের পর লকডাউন না-করলে অনলাইন ব্যবসা থিকথিক করে বাড়বে না, এই জমিটা ফার্মা কোম্পানিদের খুব দরকার। তাই সরকারকে দিয়ে তারা যা খুশি তাই করাবে।
অনেকে বলছেন, ডাক্তাররা তাহলে পড়িমরি করে ভ্যাকসিন নিতে বলছেন কেন? ডাক্তারি বিষয় তো তাঁরাই ভাল বোঝেন।
বোঝার তো কথা। কিন্তু ডাক্তাররা বললেই কি তা বাইবেলের দিব্যজ্ঞান হয়ে গেল? বরং আমরাও তাঁদেরকে বলতে পারি, ভ্যাকসিনের ‘ফ্যাক্ট শিট’-এ তাহলে ‘এমার্জেন্সি’, ‘রেস্ট্রিকটেড ইউজ’, ‘সিলেকটিভ ইউজ এন্ড পারপাস’, এইসব কথা লেখা আছে কেন? এগুলো থাকলে আর গণটিকাকরণের কথা আসে কীভাবে? এটা নিয়ে কিন্তু ডাক্তাররা বলছেন না। বলছেন শুধু সাইড এফেক্টস নিয়ে, ভ্যাকসিনের নাকি সাইড এফেক্ট নেই। নির্দোষ কথাবার্তা! সাইড এফেক্টস নেই তা জানলেন কীভাবে? আমাদের দেশে সেই তথ্য জোগাড় করার খাতাই তেমন খোলা হয়নি। এসব কথা উঠলে, এইসব ডাক্তাররা যখন আর যুক্তিতে পারেন না তখন বলে দেগে দেন, ভ্যাক্সিন নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলছে তারা অ্যান্টি- ভ্যাকসিন। আমরা নাকি ডাক্তারদের ছোটো করছি।
ডাক্তারবাবুদের বলি, নিজেকে শিক্ষিত ভাবুন, আপত্তি নেই; অপরকে অশিক্ষিত ভাববেন না।
আরো পড়ুন : করোনা আতঙ্কের ব্যবসা, পর্ব-১
তবুও ডাক্তারবাবুরা নাচার। অনেক পাশ্চাত্যশিক্ষিত, বঙ্গীয় অধ্যাপকের কড়া দর্পবানী শুনলাম, আজ ভ্যাকসিন না এলে রাস্তায় রাস্তায় মৃতদেহ পড়ে থাকত! তো তাদেরকে সবিনয় প্রশ্ন করি –
১) ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের রিস্ক বেনিফিট রেশিওর তথ্য নিয়ে কথা বলুন।
২) এই যে বলছেন, ভ্যাকসিনের কাজ হয়েছে বলেই লোকমৃত্যু কয়েকশ কোটি থেকে এত এত কম হল, এসব তো আপনাদের বয়ান মাত্র। কোন সরকারি তথ্য নেই এই কথাটিকে মান্যতা দেবার। বরং উল্টো প্রমাণ আমাদের হাতে আছে।
২) ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের রকম নিয়ে কথা বলুন।
৩) ভ্যাকসিন কাকে বলে? ভ্যাকসিনের সংজ্ঞা চুপিচুপি গত সেপ্টেম্বর মাসে পাল্টে দেওয়া হল কেন? কী পাল্টানো হল, কেন, আগে কী ছিল, পরে কী হল, এগুলো নিয়ে বলুন।
৪) চিকিৎসকদের কে ছোটো করেছে? বরং তাঁরাই বলুন, অন্যদের চেয়ে তাঁরা নিজেদেরকে বড়ো ভাবছেন কেন? সীমান্তে যখন দেশের সেনা তথাকথিত শত্রুপক্ষের গুলিতে নিহত হন, ওটা তাঁর চাকরি, তাঁর কর্তব্য। যুদ্ধে না-যাওয়াটাই অকর্তব্য। ঠিক তেমনি ডাক্তারদেরও চিকিৎসা করা একটা কাজ। না-করাটা অপরাধ। এভাবে সমাজ থেকে নিজেদেরকে ডিস্ক্রিমিনেট করছেন কেন? কারণটা বলুন না! সমাজ তো আপনাকে সম্মান, মর্যাদা দিয়েছে… আর কী চান? সমাজকে ভুল পথে চালনা করলে যে সম্মান থেকে বঞ্চিত হবেন, মনে আছে তো!
আর যেসব সুনাগরিক এখনও সরকার/কর্পোরেট-এর মতিগতি বুঝতে পারছেন না তাঁরা ভ্যাকসিনের রকমরকম বয়ানের নাটক ও লকডাউনের সাপলুডো খেলা দেখতে থাকুন। নতুন নতুন বয়ান তৈরি হবে। একদিন না-একদিন অবশ্য বুঝতে পারবেন, তবে বড্ড দেরি হয়ে যাবে।
ভালোবাসার পক্ষে থাকুন, নিবিড়-এর সঙ্গে থাকুন
Label photo created by rawpixel.com – www.freepik.com

