ব্লুটুথের কথা আমরা সবাই জানি। এ হল এক ধরনের ওয়্যারলেস টেকনোলজি যার মাধ্যমে ১০ থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে কোনওরকম ওয়্যার (তার) ছাড়া দুটো বা তার বেশি ডিভাইসের মধ্যে ডেটা ট্রান্সফার করা যায়। ১৯৯০ সালে নেদারল্যান্ডের বিখ্যাত কালেক্টরেট ইঞ্জিনিয়ার জাপ হার্টসেন ব্লুটুথ আবিষ্কার করেন। যে কারণে তাঁকে ব্লুটুথের জনকও বলা হয়। কিন্তু জনকের নামের সঙ্গে এই প্রযুক্তির নামের কোনও মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ব্লু টুথ অর্থাৎ নীল দাঁত, এই নামকরণটি হয় এক ভাইকিং রাজা হারাল্ড ব্লাটান্ড গোর্মসনের নামানুসারে। তিনি ছিলেন ডেনমার্কের অন্যতম বিখ্যাত এক রাজা এবং একজন ভাইকিং। তাঁর নামের ‘ব্লাটান্ড’ কথাটির অর্থ নীল দাঁত। কথিত রয়েছে, রাজার একটি দাঁত নাকি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল এবং সেই নষ্ট দাঁতটি ছিল ঘোর নীল বর্ণের! এই জন্য রাজার নতুন নাম হয়ে যায় ‘হারাল্ড ব্লু টুথ’।
আরো পড়ুন : বগুড়ার মায়াবী দইয়ের খ্যাতি বিশ্বজোড়া

অবশ্য আরেকটি গল্পও বেশ প্রচলিত৷ রাজা হারাল্ড নাকি ব্লুবেরি খেতে খুবই পছন্দ করতেন। প্রায় সবসময়ই তিনি এই ফলটি খেতেন। তাই রাজার দাঁত হয়ে গিয়েছিল নীল। এই কারণেই রাজাকে ‘ব্লু টুথ’ নামেই বেশি ডাকা হতো। ৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু করে প্রায় ৩০ বছর ডেনমার্কে রাজত্ব করেন রাজা ব্লু টুথ। ১৯৯৬ সালের দিকে ইন্টেলের এক প্রকৌশলী জিম কারদাক ও এরিকসনের এক প্রকৌশলী সেভেন ম্যাটিসন নিজেদের মধ্যে ইতিহাস নিয়ে গল্প করছিলেন।
ম্যাটিসন কয়েকদিন আগেই দি লংশিপ নামে একটি বই পড়েছিলেন। সেই বইয়ে রাজা হারাল্ড ব্লুটুথের নানা কাহিনি উল্লেখ ছিল। পরে ইতিহাসপ্রেমী জিম ঘরে ফিরে ‘দি ভাইকিংস’ নামে একটি বই পড়েন। সেখানে তিনি রাজা ব্লুটুথের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন। যা পরবর্তীতে তারবিহীন এই প্রযুক্তির নামকরণের সময় কাজে আসে। নামকরণের পাশাপাশি ব্লুটুথ টেকনোলোজির লোগোটিরও কিন্তু রয়েছে একটি বিশেষত্ব।
আরো পড়ুন : জলের ময়ূর থাকে গ্রাম বাংলায়, দেখেছেন কি?
এতদিন ধরে হয়তো ব্লুটুথ লোগোটি দেখে আপনি মনে করেছিলেন, কয়েকটি সরলরেখাকে বিশেষভাবে সাজিয়ে একটি B তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি তা নয়, খেয়াল করলে দেখবেন লোগোর B টি আসলে নর্ডিক ভাষার H ও B এর মিলনের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে, যা আসলে Harald Bluetooth এর নামের আদ্যক্ষর। এই দুটি অক্ষরকে একত্র করার ফলে তা একটি B অক্ষরের রূপ নিয়েছে এবং পরিণত হয়েছে আমাদের বর্তমানের বহুল প্রচলিত ব্লুটুথের লোগোতে। হাজার বছর আগে মৃত্যু হলেও আজও এভাবেই সবার পকেটে পকেটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সেই ভাইকিং রাজা।
ভালোবাসার পক্ষে থাকুন, নিবিড়-এর সঙ্গে থাকুন
