মুঘল আমলে সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার ছিল বিরিয়ানি। তবে বিরিয়ানির জন্ম কীভাবে বা এর স্রষ্টা কে, তা নিয়ে কিন্তু যথেষ্ট মতভেদ আছে। কারণ বৈদিক যুগেও ঘি, সুগন্ধি মশলা, চাল ও মহিষের মাংস মিশ্রিত খাবারের কথা বর্ণিত আছে। তখন এই খাবার খাওয়া হতো মূলত ক্ষত্রিয় বংশে। তবে বিরিয়ানির জন্ম নিয়ে বিতর্ক যাই থাক না কেন, এক সমীক্ষা বলছে বেশির ভাগ বাঙালির পছন্দের শীর্ষে রয়েছে বিরিয়ানি। বছর কুড়ি আগেও কিন্তু এ শহরে বিরিয়ানি এত সহজলভ্য ছিল না। একমাত্র মিলত আভিজাত কোনো অনুষ্ঠানে।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বিরিয়ানির স্বাদ এবং রং এক নয়। তবে ভারতে কলকাতা বাদে বিরিয়ানিতে আর কোথাও আলুর ব্যবহার হয় না। কলকাতার বিরিয়ানি বলতে যা বোঝায়, তার স্বাদ এবং আলুর আগমন ঘটে নবাব ওয়াজিদ আলির হাত ধরেই। আওয়াধের শেষ নবাব ছিলেন ওয়াজিদ আলি শাহ। তিনি ছিলেন সঙ্গীত এবং কবিতাপ্রেমী। ইংরেজদের অত্যাচারে খোয়া যায় রাজপাট। দু’বছর ইংরেজরা কারারুদ্ধ করে রাখার পর ১৮৫৬ সালে ইংরেজরা নবাবকে পাঠিয়ে দেন কলকাতায়। ওয়াজিদ আলি স্থান হিসেবে বেছে নেন কলকাতার মেটিয়াবুরুজ অঞ্চলকে।
আরো পড়ুন : মুগের জিলিপি বানাবেন কীভাবে?
সেই সময় নবাবের সঙ্গে স্বেচ্ছায় কলকাতায় চলে আসেন তার কবি, সাহিত্যিক, সঙ্গীতশিল্পী, রাঁধুনি-সহ প্রচুর গুণী মানুষ। নবাব ওয়াজিদ আলি যখন কলকাতায় আসেন, তখন তার স্বচ্ছলতা তেমন ছিল না। ফলে বেশিদিন মাংস সহযোগে বিরিয়ানি খাওয়াতে পারেননি কলকাতাবাসীকে। তাই বিরিয়ানিতে মাংসের পরিবর্তে যোগ হয় আলু। সে সময় আলু আজকের মতো এত সহজলভ্য ছিল না। পর্তুগিজদের হাত ধরে কলকাতায় আসা আলুর দাম ছিল বেশি। সে যুগে আলু মানেই ছিল উঁচু দরের সবজি। কিন্তু মাংসের তুলনায় খরচ অনেকটাই কম পড়ত।
ইতিহাস বলছে, সম্রাট হুমায়ুন ছিলেন পারস্য সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত। রাজপাঠ হারিয়ে হুমায়ুন যখন ইরানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তখন তাকে পারস্য সম্রাট লাল গালিচা বা রেড কার্পেটে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। এছাড়া ইরানের খাদ্য পরিবেশনার রীতি অনুযায়ী, রুপোর পাত্রে খাবার আনা হয় লাল কাপড় দিয়ে ঢেকে। যা পরে মুঘল আমলেও চালু হয়েছিল। খাদ্য পরিবেশনে রঙের এই প্রথা লখনৌয়ের নবাবরাও অনুসরণ করেছিলেন। আজ বিরিয়ানি সহজলভ্য হলেও, এক সময় কিন্তু ছিল আভিজাত্যেরই প্রতীক। তাই ব্যবহৃত হয় লাল কাপড়।
আরো পড়ুন : লোভনীয় মিষ্টি দরবেশ বানাবেন কীভাবে?
পোলাও ও বিরিয়ানি দুটো খাবারই সুগন্ধি চাল ও মাংস দিয়ে রান্না করা হয়। তারপরও এদের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। পোলাও এবং বিরিয়ানির মূল পার্থক্য যতটা না রান্নার প্রণালীতে তার চেয়েও অনেক বেশি মশলার ব্যবহারে। বিরিয়ানির মশলায় উপাদানের বৈচিত্র্য অনেক বেশি, মশলাও ব্যবহার করা হয় তুলনামূলক বেশি পরিমাণে। এ কারণে বিরিয়ানির মশলার ঝাঁঝ পোলাওয়ের চেয়ে অনেক বেশি কড়া। এখনও মধ্য এশিয়ার উজবেকিস্তান বা তুর্কমেনিস্তানে গেলে দেখা মেলবে আমাদের এখনকার পোলাও এবং বিরিয়ানির আদিরূপের।
ভালোবাসার পক্ষে থাকুন, নিবিড়-এর সঙ্গে থাকুন
Image by Anil sharma from Pixabay
