দেশের পর্তুগিজ কলোনি বলতে প্রথমেই আমাদের মাথায় আসে গোয়ার কথা। কিন্তু আরও কিছু ছোট পর্তুগিজ উপনিবেশ ছিল দেশের নানা প্রান্তে। হুগলির ব্যান্ডেল তার মধ্যে অন্যতম। বাংলায় চিজের জন্মস্থান কিন্তু এই ব্যান্ডেলেই। পর্তুগিজরা যখন বাংলায় এসে পৌঁছায়, তখন এখানকার সুলতান ছিলেন হুসেন আলাউদ্দিন। তৎকালীন সুলতান তাদের হাতে সপ্তগ্রাম ও চট্টগ্রামের শুল্কের দায়িত্ব তুলে দেন।
অর্থাৎ, সুলতান বন্দর থেকে বিভিন্ন পণ্যবাহী জাহাজ থেকে নিজের কর আদায়ের এক্তিয়ার তুলে দেন পর্তুগিজদের হাতে। একই সঙ্গে তাদের ব্যবসার অনুমতিও দেওয়া হয়। এরপর, ১৬৩২ সালে মুঘল সম্রাট হুগলি আক্রমণ করেন এবং পর্তুগিজদের পরাস্ত করেন। ফলে হেরে যাওয়া পর্তুগিজদের বসতি তৈরি হয় হুগলির ব্যান্ডেলে। যাঁরা সংখ্যায় ছিলেন খুব কম। সেখানে তাঁরা স্থানীয় রাঁধুনি নিয়োগ শুরু করেন, যাঁরা পর্তুগিজ প্রণালী রপ্ত করেন এবং তা ছড়াতে থাকেন।
আরো পড়ুন : মুগের জিলিপি বানাবেন কীভাবে?
ধীরে ধীরে সেই সব রান্নার টেকনিক স্থানীয় রান্নাবান্নার ধাঁচের সঙ্গে মিশে যায়। এবং তৈরি হয় ‘ব্যান্ডেল চিজ’। মনে করা হয় বার্মিজ রাঁধুনির হাতে পর্তুগিজদের তত্ত্বাবধানে তৈরি হয় এই চিজ। পরবর্তীকালে পর্তুগিজরা বাংলা থেকে চলে গেলেও ব্যান্ডেল চিজ কিন্তু তার ঐতিহ্য হারায়নি এতটুকুও। গোল ডিস্কের শেপের এই চিজ তৈরি হয় গরুর দুধ থেকেই। এর দু’টি ধরন পাওয়া যায়, যথা – সাধারণ এবং ধূমায়িত।
প্রথমটির রং সাদা, অপরটির ধূসর। এই চিজ এখন তৈরি হয় শুধুমাত্র তারকেশ্বর এবং বিষ্ণুপুরের গ্রামে এবং পাওয়া যায় কলকাতার নিউ মার্কেটে। কয়েক শতক ধরে মুগ্ধ ভক্তকুল গড়ে উঠলেও বাংলার নিজস্ব এই চিজ এখনও কুটির শিল্পের স্তরেই রয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনলজি অ্যান্ড বায়োকেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৎপরতায় ব্যান্ডেল চিজের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা জরিপ করা ও উৎপাদকদের অর্থনৈতিক বিকাশের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প সদ্য শুরু হয়েছে। এর পৃষ্ঠপোষকতা করছে উচ্চশিক্ষা দফতরের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিভাগ।
আরো পড়ুন : বিরিয়ানির পাত্রে কেন লাল কাপড় থাকে?
এক সরকারি কর্তার কথায়, ‘‘ব্যান্ডেল চিজের ঐতিহাসিক নথি খুঁজে বের করা থেকে শুরু করে পরীক্ষাগারে এর উপাদান খুঁটিয়ে দেখাটা জরুরি। এই চিজের মান নির্দিষ্ট করে প্যাকেজিং দরকার। সেই লক্ষ্যেই কাজ চলছে।” অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর ‘বিশ্ববাংলা’ ভাবনায় রাজ্যের চেনা-অচেনা সম্ভাবনাময় সব উৎকর্ষকেই মেলে ধরার চেষ্টা শুরু হয়েছে। সদ্য জিআই-তকমাপ্রাপ্ত রসগোল্লা, জয়নগরের মোয়া থেকে শুরু করে বালুচরি, মসলিন, পটচিত্র, নকশি কাঁথার প্রসার-প্রচারের ছক কষা হচ্ছে। এই তালিকাতেই এবার শিকে ছিঁড়তে পারে ‘ব্যান্ডেল চিজ’-এর বরাতে।
ভালোবাসার পক্ষে থাকুন, নিবিড়-এর সঙ্গে থাকুন
